মানুষ ও ‘হ্যাঁ’ ভোটকে বিজয়ী করার পবিত্র দায়িত্ব আজ ভোটারের-চাঁদাবাজ-দুর্নীতিবাজকে নির্বাচিত করলে দায় জনগণেরই

মো:আবু তাহের পাটোয়ারী:
রাষ্ট্রের সংকট কোনও হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা নয়
বাংলাদেশ আজ যে রাজনৈতিক,প্রশাসনিক,অর্থনৈতিক ও নৈতিক সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে-এটি কোনো আকস্মিক দুর্যোগ নয়; এটি দীর্ঘদিনের বাছাই করা ভুল নেতৃত্বের ফল। আমরা মুখে ঘৃণা করি চাঁদাবাজ,দুর্নীতিবাজ, টেন্ডারবাজ
,কমিশনখোর,বন্দর লুটেরাদের;আমরা নেতাদের গালি দিই, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দিই; কিন্তু ভোটের দিনে-এক সিদ্ধান্তেই আমরা ভুল করে বসি।যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়,যাদের সম্পদের উৎস প্রশ্নবিদ্ধ, যাদের রাজনীতি টেন্ডার-চাঁদা-দখলকেন্দ্রিক-ঠিক সেই মানুষগুলোকেই আমরা নির্বাচিত করি। তারপর পাঁচ বছর তাদের অত্যাচার,লুটপাট,সিন্ডিকেট ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে আবার ক্ষুব্ধ হই।

এ এক বিস্ময়কর বৈপরীত্য-যাদের আমরা ঘৃণা করি, তাদেরই আমরা ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসাই।আর সেই ভুলের দায় কার? উত্তর একটাই-জনগণ।একটি সমাজ নিজের বিবেককে অমান্য করে অপরাধীকে নেতৃত্বে পাঠালে সেই সমাজ কখনো ন্যায়, উন্নয়ন বা গণতন্ত্র পায় না। রাষ্ট্রের চরিত্র নির্ধারণ করে নেতা নয়-নির্বাচন ও ভোটার।আজকের বাংলাদেশের সংকটের মূল অপরাধী কোনো ব্যক্তি নয়-বরং ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া জনগণের সম্মিলিত বিবেক।

গণভোটে “হ্যাঁ” ভোট: নতুন রাষ্ট্রগঠনের প্রথম ধাপ
বাংলাদেশ এখন এক ঐতিহাসিক যুগসন্ধিক্ষণে-যেখানে একটি ভোটই নির্ধারণ করবে রাষ্ট্র কোন পথে যাবে। দীর্ঘ দশক ধরে রাজনীতির ওপর জমে থাকা ভয়,দুর্নীতি,দমন–পীড়ন, দলীয় দখল, বিচারহীনতা, ক্ষমতার অপব্যবহার-সবকিছুর অবসান ঘটানোর মূল অস্ত্র হলো এই গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট।

কেন‘হ্যাঁ’ভোট জরুরি?কারণ “হ্যাঁ”ভোট মানে-রাষ্ট্র পুনর্গঠনের প্রতি সমর্থন দুর্নীতিবাজ-চাঁদাবাজদের রাজনীতি প্রত্যাখ্যান জনগণের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা ন্যায়-স্বচ্ছতা-জবাবদিহির পক্ষে রায় নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপন প্রশাসনিক, বিচারিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের বৈধতা অতীতের অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে জনমতের সুনামি এই “হ্যাঁ” ভোটকে বিজয়ী করবে কে?কেউ না-শুধু জনগণ।এটি কোনো দল, গোষ্ঠী, বা ক্ষমতার লড়াই নয়;এটি জনগণের বিবেকের যুদ্ধ। এক কথায়, এটি একটি নৈতিক বিপ্লব।

অতীতের ভুল সিদ্ধান্ত-আজকের ভয়াবহ সংকট
বাংলাদেশ গত কয়েক দশক ধরে ক্রমাগত ভুল সিদ্ধান্তের কারণে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। এর তিনটি প্রধান কারণ:ভুল মানুষকে ভোট দেওয়া যে ব্যক্তি রাতারাতি সম্পদের পাহাড় বানায়,যার বাড়ি-গাড়ি-হোটেল-জমি-বন্দর-টেন্ডার-কোম্পানির উৎস অজানা-তাকে ভোট দিলে সে জনগণের হয় না, হয়ে যায় মাফিয়া সিন্ডিকেটের দাস।সে যখন সংসদে যায়, তখন তার প্রথম কাজ হয় “খরচ ওঠানো”-এতে জনগণের ক্ষতি,আর লাভ হয় তার ব্যক্তিগত সাম্রাজ্যের।

চক্রবদ্ধ দখল-কল্লোল রাজনীতিকে বৈধতা দেওয়া যে রাজনীতিতে “দলীয় আশ্রয়” মানে দখলদারি;যে রাজনীতিতে “নেতার আশীর্বাদ” মানে টেন্ডার ভাগাভাগি,যে রাজনীতিতে “নেতার স্নেহ” মানে কমিশনের একটি অংশ-সেই রাজনীতিকে বারবার ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসানোই আজকের সংকটের জন্ম দিয়েছে। সৎ ও মেধাবীদের রাজনীতি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া যেখানে রাজনীতিতে প্রবেশ ফি কোটি টাকা,যেখানে নির্বাচনে দাঁড়াতে হলে লাগে কালো টাকার পাহাড়,যেখানে সংগঠন চালাতে লাগে চাঁদাবাজির বাজেট-সেখানে সৎ, আদর্শিক, দেশপ্রেমিক মানুষ টিকবেই বা কীভাবে?ফলে রাজনীতি চলে যায় দখলদার, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও টেন্ডারবাজদের হাতে।দেশ হয়ে পড়ে অনৈতিক লোকদের কর্পোরেট খেলার মাঠ।

ভোটারের সামনে আজকের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন:দেশকে কার হাতে দেবেন?একজন ভোটার যখন কেন্দ্রে ঢোকে, তখন সে শুধু একজন ব্যক্তি নয়।তার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে-তার সন্তানের ভবিষ্যৎ তার পরিবারের নিরাপত্তা তার এলাকার উন্নয়ন তার দেশের অর্থনীতি তার সমাজের ন্যায়বিচার একটি ভুল ভোট মানে নিজের ভবিষ্যৎকে ছিন্নভিন্ন করা।একটি সঠিক ভোট মানে নতুন ভবিষ্যতের দরজা খুলে দেওয়া।

চাঁদাবাজ-দুর্নীতিবাজ নির্বাচিত হলে যে ভয়াবহ ক্ষতি হয়
দুর্নীতি রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতিতে পরিণত হয় একবার দুর্নীতিবাজ ক্ষমতায় এলে দুর্নীতি আর অপরাধ থাকে না-সেটি হয়ে যায় নিয়ম, নিয়মের ব্যাখ্যা, নিয়মের বৈধতা। উন্নয়ন থেমে যায়-লুটপাট চলতে থাকে অবিরত প্রকল্পের ৪০-৬০% টাকা চলে যায় ভাগবাটোয়ারা,কমিশন ও সিন্ডিকেটে।কাগজে ১০০% কাজ, বাস্তবে ৩০%-এভাবেই থেমে যায় দেশের গতি।প্রশাসন দুর্নীতিবাজ এমপির তল্পিবাহকে পরিণত হয়এসপি-ডিসি-ওসি-প্রকৌশলী-সবাইকে চাপ দেওয়া হয় “আমার লোক”,“আমার কমিশন”, “আমার সুবিধা” নিশ্চিত করতে।রাষ্ট্র হয়ে পড়ে কয়েকজন দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদের ব্যক্তিগত কোম্পানি।জনগণ হয় নির্বাক-অন্যায় হয় স্বাভাবিক দলীয় দখলদাররা চড়ে বসে জনগণের মাথায়।ভয় হয় প্রধান আইন,ন্যায়বিচার হয় ব্যতিক্রম।গণতন্ত্র হয়ে পড়ে নিছক নাটক।

কাকে ভোট দেবেন? স্পষ্ট তিনটি মানদণ্ড
সততা:যার নামে দখল,টেন্ডার,চাঁদাবাজি নেই;যাকে তার এলাকার মানুষ “ভালো লোক” বলে চেনে;যার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হঠাৎ ফুলে ওঠেনি।যোগ্যতা ও মেধা:সংসদ সদস্য কোনো স্লোগানবাজের পদ নয়-এটি আইন তৈরির পদ।যে নিজেই অশিক্ষিত,অনভিজ্ঞ,অদক্ষ-সে একটি দেশের ভবিষ্যৎ ঠিক করবে কীভাবে? জনগণের পাশে থাকা মানুষ যে সুখে-দুঃখে মানুষের সঙ্গে থেকেছে,যে ক্ষমতা নয়,দায়িত্বকে গুরুত্ব দেয়-সেই মানুষই প্রকৃত জননেতা।

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ভোটের বিজয় কেন জরুরি?
পুরনো দুর্নীতির রাজনীতি ভেঙে নতুন রাষ্ট্রের সূচনা
‘হ্যাঁ’ভোট মানে দুর্নীতি-চাঁদাবাজ-সিন্ডিকেট রাজনীতি প্রত্যাখ্যান।জনগণের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা ফিরে পাওয়া দল নয়-জনগণ হবে সিদ্ধান্তের মালিক।বিচারহীনতা ও অত্যাচারের সংস্কৃতি ভাঙাজবাবদিহির ভিত্তি গড়ে উঠবে নতুনভাবে।সৎ, মেধাবী নেতৃত্বের উত্থানের সুযোগ সৃষ্টি দখলদার রাজনীতি ভেঙে গেলে জায়গা পাবে প্রকৃত যোগ্য নেতৃত্ব।বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে ভোটারের বিবেকের ওপর যে জাতি নির্বাচনকে বিক্রি করে-সেই জাতি ভবিষ্যৎ বিক্রি করে।যে জাতি দুর্নীতিবাজকে ক্ষমতায় পাঠায়-সেই জাতি নিজের ভাগ্য ধ্বংস করে।কিন্তু-যে জাতি সততা, ন্যায়, বিবেক এবং ‘হ্যাঁ’ ভোটকে বেছে নেয়-সেই জাতিই নতুন বাংলাদেশ গড়ে।

ভোটারদের অঙ্গীকার: নতুন রাষ্ট্রগঠনের শপথ
টাকা নয়-নীতিকে ভোট দেব পরিচয় নয়-যোগ্যতাকে ভোট দেব ভয় নয়-সাহসকে ভোট দেব অন্ধ আনুগত্য নয় সংবিধানকে ভোট দেব দল নয়-জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেব। জনগণই রচবে নতুন রাষ্ট্রের ইতিহাস বাংলাদেশকে পরিবর্তন করবে দল নয়-জনগণ।গণভোটে “হ্যাঁ” ভোট এবং জাতীয় নির্বাচনে সৎ, মেধাবী, জনবান্ধব নেতৃত্বকে বিজয়ী করা-এই দুটি সিদ্ধান্তই ঠিক করবে বাংলাদেশ দুর্নীতির অন্ধকারে যাবে,নাকি নতুন আলোর যুগে প্রবেশ করবে।

আপনার একটি ভোটই রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারে আপনার ভোটই নির্ধারণ করবে-বাংলাদেশ পুরনো অন্ধকারে ডুবে যাবে,নাকি উঠবে নতুন আলোয় ভরা ভবিষ্যতের পথে।দায়িত্ব ভোটারের।ভবিষ্যৎ ভোটারের।নতুন বাংলাদেশ-ভোটারেরই হাতে।

মো:আবু তাহের পাটোয়ারী
সম্পাদক,নবজাগরণ
অনলাইনে পড়ুন: www.thenabajagaran.com
লেখাটি দেশপ্রেমিক মানবহিতৈষী হিসেবে শেয়ার করুন।