বিদেশি পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর: কাঁপছে দুর্নীতিবাজ-চাঁদাবাজ ও চোর-ডাকাত সিন্ডিকেট!

বিক্ষোভ ডাক দিয়ে রাস্তায় চর্মচ্যুত মার্কসবাদ-লেনিনবাদী ভারতপন্থী বাম দালাল গোষ্ঠী

মো:আবু তাহের পাটোয়ারী:
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে লাভজনক এবং সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত খাত-চট্টগ্রাম বন্দর। এই বন্দর শুধু সমুদ্রপথ নয়,এটি দেশের আমদানি-রপ্তানির হৃদপিণ্ড, অর্থনীতির স্নায়ুকেন্দ্র এবং দুর্নীতিবাজ-চাঁদাবাজ-ঘুষখোর-টেন্ডারবাজ চক্রের বংশবৃদ্ধির উর্বর ভূমি।দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে একদল ক্ষমতাসীন দালাল, আমলাতান্ত্রিক চক্র, রাজনৈতিক দস্যু এবং বামপন্থী ছদ্মবেশী বুদ্ধিজীবী-সবাই মিলে এই বন্দরটিকে“সোনা ফলানো গরু”র মতো দোহন করেছে।একেকটি কনটেইনার ক্লিয়ার থেকে শুরু করে একটি টেন্ডার অনুমোদন-প্রত্যেক ধাপে “সিস্টেম” নামে পরিচিত দুর্নীতির মহাসড়ক চলেছে অবাধে।

হঠাৎ যখন দেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা এলো-চট্টগ্রাম বন্দরের একটি অংশ আন্তর্জাতিক মানের বিদেশি অপারেটরের ব্যবস্থাপনায় আনা হবে,তখনই যেন দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের তলপেট কেঁপে উঠলো।কারণ বিষয়টি খুবই সহজ-বিদেশি ব্যবস্থাপনা মানে কাগজপত্র স্বচ্ছ, লুকোছাপা নেই,ঘুসাখোরির পথ বন্ধ,ডিজিটাল অডিট বাধ্যতামূলক।যেখানে সবকিছু খোলা ও নিয়মমাফিক চলবে,সেখানে চাঁদাবাজি,সন্ত্রাস,অতিরিক্ত বিল,অবৈধ গেটপাস,রাতের বন্দর লুট-কিছুই আর চলবে না।এটাই এখন দুর্নীতিবাজদের বড় আতঙ্ক।

বিদেশি পরিচালনার খবর পৌঁছাতেই সিন্ডিকেটের ভিত কাঁপা শুরু বিগত ১৬ বছরের দুর্নীতির সাম্রাজ্যটা কীভাবে চলতো?প্রতিটি কনটেইনার আনলোডে “টোকেন”শিপিং এজেন্টদের চাঁদা ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান সিন্ডিকেট কাস্টমসের প্রতিটি ডেস্কে আলাদা‘খরচ তালিকা’স্টেভেডরিং শ্রমিকদের নামে বিল, যা আসলে যেতো রাজনৈতিক নেতাদের পকেটে টেন্ডার দিয়ে বন্দর কনট্রাক্টগুলো ক্ষমতাসীনগোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠদের হাতে তুলে দেওয়া এই চক্র বছরে অদৃশ্যভাবে ৪০-৫০ হাজার কোটি টাকা লুট করেছে-এটা খোলা গোপন।যখন এই টাকা প্রবাহ বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলো,তখনই সিন্ডিকেটরা বুঝে গেল-তাদের দিন শেষ।এই সিন্ডিকেটের মাংস-হাড় দিয়ে দশকের পর দশক মোটা হওয়া একটি গোষ্ঠী এখন আতঙ্কে দৌড়াচ্ছে।এরা রাজনীতির নামে সন্ত্রাস,শ্রমিক অধিকারের নামে লুটপাট, আর বামপন্থার নামে এক দেশের দালালি করে এসেছে।তারাই এখন চট্টগ্রাম বন্দর ইস্যুতে“দেশ রক্ষার আন্দোলন” করার ভান করছে।

বামপন্থীদের হঠাৎ জাগরণ: আসলে জনগণের জন্য না, সিন্ডিকেট বাঁচাতে সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় হলো-যারা দীর্ঘ ১৬ বছর দেশে একটাও গণতন্ত্রবিরোধী, একটাও দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন করেনি,সেই “মার্কসবাদ-লেনিনবাদী” দাবিযুক্ত বামপন্থীরা হঠাৎ রাস্তায় নেমেছে বন্দর রক্ষার নামে। কিন্তু তাদের বক্তব্য, স্লোগান ও ব্যানারে মানুষ স্পষ্ট বুঝে গেছে-এটা দেশ রক্ষার আন্দোলন নয়,এটা বন্দর সিন্ডিকেট বাঁচানোর আন্দোলন।যে সব বামপন্থী দল অতীতে-সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যাবিদ্যুৎ খাতে রেন্টাল লুট কৈলাশ -তিতাস-রামপালে ভারতীয় কর্পোরেট আধিপত্য পানিবণ্টন বৈষম্য কৃষকেরধান-পেঁয়াজ বাজার ধ্বংস-এসব বিষয়ে কথা বলেনি,তারাই হঠাৎচট্টগ্রাম বন্দর প্রশ্নে লাফিয়ে উঠেছে।কারণ খুব পরিষ্কার -দুর্নীতিবাজ-চাঁদাবাজ-টেন্ডারবাজ-ভারতপন্থী রাজনৈতিক চক্রের সঙ্গে বামপন্থীদের দীর্ঘদিনের অঘোষিত স্বার্থসম্পর্ক রয়েছে।এই স্বার্থই তাদের রাস্তায় নামিয়েছে।দেশপ্রেম নয়।

যমুনা অভিমুখে বিক্ষোভে লাঠিপেটা:বামপন্থীদের মুখোশ খুলে গেল যন্ত্রের মতো মুখস্থ করা স্লোগান-“সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রাম”জাতীয় সম্পদ রক্ষা“বন্দর বাঁচাও”এসব স্লোগান দিয়ে বামপন্থীরা যখন যমুনা অভিমুখে বিক্ষোভ বের করলো,কিন্তু সাধারণ মানুষ পাশে দাঁড়ালো না।কারণ-এরা জনগণের পক্ষে নেই, এরা দুর্নীতির পক্ষে দাঁড়িয়েছে।ফলাফল?পুলিশের লাঠি ঘুরতেই বামপন্থী দলের ব্যানার-ফেস্টুন উড়ে গেল, নেতারা কোণঠাসা হয়ে পড়ে,মাঠে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না।এবার গণমানুষ দেখলো-এরা না সমাজতন্ত্রী, না বিপ্লবী-এরা স্রেফ অকার্যকর ভারতপন্থী দালাল গোষ্ঠী,যারা “বাম” নাম দিয়ে ১৬ বছর ক্ষমতাসীনদের তোষণ করে এসেছে।

বন্দর বিদেশি পরিচালনা কি সত্যিই দেশের জন্য খারাপ?
জনগণ এখন প্রশ্ন করছে-এই বিদেশি পরিচালনায় ক্ষতিটা কার?দেশের?নাকি যারা বন্দরকে নিজেদের ব্যক্তিগত টাকাশোধন খাত বানিয়ে রেখেছিল তাদের?বিদেশি অপারেশনের ফলে যা হবে:আন্তর্জাতিক মানের সিকিউরিটি
ডিজিটাল অডিট, স্ক্যানার বাধ্যতামূলক কনটেইনার গতিবেগ ও স্বচ্ছতা বাড়বে রপ্তানি-আমদানি সময় কমবে ট্রাক–ভ্যান সিন্ডিকেট ভাঙবে শ্রমিক রোল,পেমেন্ট ও বেনিফিট নিয়ন্ত্রণে আসবে রাষ্ট্রের আয় বাড়বে অর্থাৎ দেশ উপকৃত হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে শুধু তিন পক্ষ-দুর্নীতিবাজ আমলা সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ টেন্ডারবাজ ভারতপন্থী বাম দালালরা যাদের লুকানো অর্থায়ন ও সুবিধা আসতো এ সিন্ডিকেটগুলো থেকে তাই তারা এখন কাঁদছে।

১৬ বছরে বামপন্থীদের ভূমিকা: বিরোধিতা তারা করেনি, করেছে দালালি যখন-দেশব্যাপী গুম ছাত্র হত্যা সাংবাদিক নির্যাতন সীমান্ত হত্যার রেকর্ড পায়রা-রামপাল লুট পেঁয়াজ-চাল-চিনি সিন্ডিকেট এসব ঘটছিল,তখন তারা কোথায় ছিল?তারা ছিল এনজিও-অফিসে গরম চায়ের কাপে “শ্রেণিবিরোধী সংগ্রাম” নিয়ে আলোচনায়।তারা ছিল বিদেশমুখী এনজিও-মিটিংয়ে ছবি তুলতে।তারা ছিল নিরাপদ দূরত্বে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে কৌশলগত মৈত্রীর আশ্রয়ে।আজ তাদের স্লোগান জনগণকে আর হাসায় না-জনগণের চোখে তারা ট্র্যাজিক কৌতুক চরিত্র।

এই সিদ্ধান্ত জনগণকে কোথায় দাঁড় করাচ্ছে?
বাংলাদেশ এখন এমন এক সময় পার করছে যখন-বিচার বিভাগ স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন শক্তিশালী সিন্ডিকেট ভাঙতে রাষ্ট্র দৃঢ় প্রশাসনে জবাবদিহি তৈরি হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের মতো প্রতিষ্ঠানকে আধুনিকায়ন ছাড়া বিকল্প নেই জনগণ তাই বুঝে গেছে-এই বিদেশি পরিচালনা সার্বভৌমত্বের হুমকি নয়,এটি হলো বন্দরের শক্তিশালী ভবিষ্যতের ভিত্তি।যারা চিৎকার করছে-তারা হারাতে যাচ্ছে তাদের অবৈধ আয়,তাদের বন্দর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা,তাদের চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য।

নতুন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার প্রথম ধাক্কায় সিন্ডিকেট কাঁপছে-এটাই বড় বার্তা এই ঘটনার মাধ্যমে দেশের মানুষ বুঝে গেছে-নতুন বাংলাদেশের নতুন সরকার আস্তে আস্তে দুর্নীতির মজ্জার ভেতর ঢুকে হাত দিচ্ছে।এটা শুধু বন্দরের প্রশ্ন নয়-এটা রাষ্ট্রশক্তির একটা বার্তা: সিন্ডিকেট ভাঙবো চাঁদাবাজ-দালালদের দৌরাত্ম্য শেষ রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যক্তিগত মালিকানা নয় রাজনৈতিক শ্রমিক বাহিনী নয়-আইনই হবে শক্তি এই বার্তাই আজ বন্দর সিন্ডিকেট আর ভারতপন্থী বাম দালালদের কাঁপিয়ে দিয়েছে।

এ আন্দোলন ‘বাম’ নয়-এ আন্দোলন সিন্ডিকেট রক্ষার শেষ চিৎকার চট্টগ্রাম বন্দরের বিদেশি পরিচালনার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা যেভাবে শুরু হয়েছে,তা দেখে এখন দেশের মানুষ স্পষ্ট বুঝেছে-এটা জনগণের লড়াই নয়। এটা কোনো আদর্শের লড়াই নয়।এটা হলো দুর্নীতিবাজদের সর্বশেষ প্রতিরোধ।জনগণ বাম-ডান-মধ্য নয়-জনগণ এখন স্বচ্ছতা,দক্ষতা আর উন্নয়নের পক্ষে।আর যেসব বামপন্থী দল বহু বছর ধরে ভারতের দালালি করে গেছে,যারা জনগণের দুঃখ-কষ্ট নিয়ে নি:শব্দ থেকেছে,তাদের আজ লাঠিপেটা হওয়াই হয়তো ইতিহাসের স্বাভাবিক প্রতিকার।কারণ-যারা জনগণের পাশে দাঁড়ায় না,ইতিহাসও তাদের পাশে দাঁড়ায় না।