তালা লাগিয়ে পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগ:শিশু হত্যার মধ্য দিয়ে কোন পথে রাষ্ট্র?

নবজাগরণ রিপোর্ট:
লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতার বাড়িতে নৃশংস হামলা,নিহত ঘুমন্ত শিশু-দগ্ধ আরও তিন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরমনসা গ্রামে যে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে, তা কেবল একটি পরিবারের ট্র্যাজেডি নয়-এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতার এক ভয়ংকর মানবিক অধ্যায়।শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) গভীর রাতে ইচ্ছাকৃতভাবে ঘরের দরজায় তালা লাগিয়ে পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে বিএনপি নেতা বেলাল হোসেনের পরিবারের ওপর চালানো হামলায় ৭ বছরের শিশু আয়েশা বেগম ঘুমন্ত অবস্থায় পুড়ে মারা গেছে। গুরুতর দগ্ধ হয়েছেন তার বাবা বেলাল হোসেন ও দুই বোন বিথি আক্তার ও স্মৃতি আক্তার।এই হত্যাকাণ্ড কোনো‘
দুর্ঘটনা’নয়-এটি ছিল পরিকল্পিত,নিষ্ঠুর ও অপরাধমূলক আগুন-সন্ত্রাস।

পরিকল্পিত আগুন, তালাবদ্ধ মৃত্যু স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে,গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা ঘরের বাইরে থেকে দরজায় তালা লাগিয়ে দেয়। এরপর পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ঘরে।ঘুমন্ত শিশুটির পালানোর কোনো সুযোগ ছিল না। দরজা ছিল বন্ধ। জানালা ছিল আগুনে ঘেরা।একটি শিশু এভাবে পুড়ে মারা যাওয়া মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। চিকিৎসা সংকট, আশঙ্কাজনক অবস্থা নিহত: আয়েশা বেগম (৭ বছর)গুরুতর দগ্ধ: বিথি আক্তার ও স্মৃতি আক্তার (ঢাকা বার্ন ইউনিটে ভর্তি) দগ্ধ:বেলাল হোসেন (লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে) চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দুই শিশুর শরীরের বড় অংশ পুড়ে গেছে।তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ছাই হয়ে যাওয়া একটি পরিবার পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়ায় বাড়িটি সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এক রাতে-একটি শিশু প্রাণ হারাল একটি পরিবার সর্বস্ব হারাল
একটি জনপদ আতঙ্কে স্তব্ধ।

রাজনৈতিক সহিংসতা নাকি ভয়ভীতি প্রদর্শনের কৌশল?
বেলাল হোসেন ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের দাবি,এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অংশ।প্রশ্ন উঠছে-কেন রাতের আঁধারে তালা লাগিয়ে আগুন?কেন শিশু ও পরিবারের সদস্যদের টার্গেট?কারা এই নৃশংসতার পেছনে?এগুলো সাধারণ অপরাধ নয়, এগুলো রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যর্থতার প্রশ্ন।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম দৃষ্টান্ত
বাংলাদেশ পরিবেশ পরিক্রমা মানবাধিকার সাংবাদিক সোসাইটির মহাসচিব মো: আবু তাহের পাটোয়ারী এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন-একটি শিশুকে পুড়িয়ে হত্যা করা কোনো রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের অংশ হতে পারে না। এটি সরাসরি মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সভ্যতার বিরুদ্ধে অপরাধ।আমরা দ্রুত,নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।”তিনি আরও বলেন-“যদি এই ঘটনার বিচার না হয়,তবে ভবিষ্যতে আরও শিশুর রক্তে রাজপথ রাঙবে। রাষ্ট্রকে এখনই কঠোর হতে হবে।

প্রশাসনের দায়িত্ব ও প্রশ্ন:পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে,তদন্ত চলছে। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা বলছে-তদন্ত ধীর হয় আসামিরা ধরা পড়ে না বিচার ঝুলে থাকে এই ঘটনায় যদি দ্রুত গ্রেপ্তার,চার্জশিট ও বিচার না হয়,তবে এটি হবে আরেকটি বিচারহীনতার দৃষ্টান্ত। দাবি স্পষ্ট এই ঘটনায় এখনই প্রয়োজন-বিশেষ তদন্ত টিম গঠন ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সন্দেহভাজনদের শনাক্ত দ্রুত গ্রেপ্তার ও রিমান্ড ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে বিচার নিহত শিশুর পরিবারের জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষতিপূরণ।

ঘুমন্ত শিশুকে পুড়িয়ে মারা কোনো রাজনৈতিক সহিংসতা নয়-এটি রাষ্ট্রের নৈতিক পরাজয়।এই আগুন শুধু একটি ঘর পোড়ায়নি,এটি আমাদের বিবেককে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।আজ যদি আয়েশার হত্যার বিচার না হয়,আগামীকাল এই আগুন যে কার ঘরে লাগবে-তা কেউ জানে না।

মো:আবু তাহের পাটোয়ারী
মহাসচিব
বাংলাদেশ পরিবেশ পরিক্রমা মানবাধিকার সাংবাদিক সোসাইটি
সম্পাদক-নবজাগরণ