সম্পাদকীয়
ছাতকের কথিত পীর গিয়াস উদ্দিন তালুকদারকে ঘিরে ওঠা অভিযোগ কেবল একটি ব্যক্তিকে ঘিরে নয়।এটি একটি বিপজ্জনক প্রবণতার প্রতিচ্ছবি,যেখানে ধর্মীয় বিশ্বাসকে পুঁজি করে বিভ্রান্তি,শোষণ ও সম্ভাব্য অস্থিরতা তৈরি করা হয়-আর রাষ্ট্র অনেক সময় নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকে।পবিত্র মক্কা-মদিনা ও মসজিদের সঙ্গে কোনো দরবার বা ব্যক্তির তুলনা-যদি অভিযোগ অনুযায়ী সত্য হয়-তবে তা নিছক বক্তব্য নয়,বরং ইসলামের মৌলিক আকিদার ওপর সরাসরি আঘাত। ইসলামে পবিত্র স্থানসমূহের মর্যাদা প্রশ্নাতীত ও তুলনাহীন। এই জায়গায় বিভ্রান্তি ছড়ানো মানে সাধারণ মানুষের ঈমান,বিশ্বাস ও ধর্মীয় জ্ঞানকে ঝুঁকির মুখে ফেলা।এখানেই প্রশ্ন ওঠে-এই ধরনের বক্তব্য কি শুধু ধর্মীয়
অপরাধ, নাকি সামাজিক অপরাধও? বাস্তবতা হলো,এটি দুটোই। কারণ ধর্মীয় বিভ্রান্তি শেষ পর্যন্ত সামাজিক অস্থিরতায় রূপ নেয়। ইতিহাস তার সাক্ষী। আরও উদ্বেগজনক হলো,অভিযোগে উঠে আসা অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও অর্থ লেনদেনের প্রসঙ্গ। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা,অশালীন আচরণ,মাদক সেবন কিংবা নজরানার নামে বিপুল অর্থ আদায়ের অভিযোগ-এসব যদি সত্য হয়,তবে তা শুধু ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয় নয়,এটি আইন ও রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলারও সরাসরি চ্যালেঞ্জ।বিশেষ করে অর্থ পাচারের অভিযোগ রাষ্ট্রের জন্য অতি স্পর্শকাতর বিষয়। ধর্মের নামে যদি মানুষের সরল বিশ্বাস ব্যবহার করে অর্থ সংগ্রহ করে তা বিদেশে পাচার করা হয়,তবে সেটি কোনোভাবেই ‘ধর্মীয় বিষয়’বলে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এটি পরিষ্কারভাবে আর্থিক অপরাধ।
এই ঘটনায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো-সমাজে বিভাজন। একদিকে অন্ধ বিশ্বাসে আবদ্ধ অনুসারীরা,অন্যদিকে ক্ষুব্ধ ধর্মপ্রাণ জনগোষ্ঠী। এই দুই মেরুর সংঘর্ষই ভবিষ্যতের অশান্তির বীজ। প্রশাসন যদি নিরপেক্ষ,দ্রুত ও দৃশ্যমান ভূমিকা না নেয়,তবে পরিস্থিতি যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে-সে আশঙ্কা অমূলক নয়।এখানে মনে রাখতে হবে,ধর্মীয় বিশ্বাস রক্ষা করা মানে প্রশ্নহীন আনুগত্য নয়। বরং প্রকৃত বিশ্বাস প্রশ্ন করতে শেখায়,যাচাই করতে শেখায়। ধর্মের নামে প্রতারণা রোধ করা ধর্মবিরোধিতা নয়-বরং ধর্মের পবিত্রতা
রক্ষার দায়িত্ব। নবজাগরণ মনে করে,এই ঘটনায় আবেগ নয়-আইনের শাসনই শেষ কথা হওয়া উচিত। অভিযোগ সত্য হলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে,আবার অভিযোগ মিথ্যা হলে সেটিও পরিষ্কারভাবে জনগণের সামনে আনতে হবে।গড়িমসি,নীরবতা কিংবা প্রভাবশালীদের ছাড় দেওয়ার সংস্কৃতি পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলবে।আজ ছাতকে যে প্রশ্ন উঠেছে,তা কেবল ছাতকের নয়-এটি গোটা দেশের। ধর্মের নামে বিভ্রান্তি আর রাষ্ট্রের নীরবতা-এই যুগলবন্দি ভাঙা না গেলে ভবিষ্যতে আরও বড় সংকট অপেক্ষা করছে।এখনই সময়-সত্যের অনুসন্ধান,আইনের প্রয়োগ এবং ধর্মের নামে সব ধরনের প্রতারণার বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার।





