প্রথম আলো ডেইলি স্টার আগুন রাষ্ট্র প্রশ্ন সংবাদকক্ষে হামলা মানেই রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার নগ্ন প্রকাশ

প্রথম আলো।
ডেইলি স্টার।
এই দুটি নাম কোনো ইট-পাথরের ভবন নয়-এগুলো বাংলাদেশের সংবাদ বিবেকের প্রতীক।আর যখন এই বিবেকে হামলা হয়,যখন সংবাদকক্ষে আগুন জ্বলে,তখন সেটি কোনো বিচ্ছিন্ন সহিংসতা থাকে না-তা পরিণত হয় রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার সরাসরি আলামতে।প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের ওপর সাম্প্রতিক হামলা ও অগ্নিসংযোগ আমাদের আবারও সেই কঠিন সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে-বাংলাদেশে আজও সত্য বলা নিরাপদ নয়। হামলা অগ্নিসংযোগ উদ্দেশ্য যাচাই করলে স্পষ্ট হয়-এই ঘটনা আকস্মিক নয়, আবেগীও নয়।এ ধরনের হামলার পেছনে থাকে তিনটি সুস্পষ্ট লক্ষ্য-ভয় সৃষ্টি সংবাদকক্ষকে অকার্যকর করা ভবিষ্যতের প্রশ্নকে আগেই দমন করা আগুন এখানে কাগজে লাগেনি,আগুন লেগেছে মতপ্রকাশের অধিকারে।ইতিহাস পুনরাবৃত্তি নীরবতা যারা আজ বিস্মিত হচ্ছেন,তাদের মনে করিয়ে দেওয়া দরকার-এর আগেও ঘটেছে।

আমার দেশ পত্রিকা অফিসে হামলা,ভাঙচুর, বন্ধ করে দেওয়া সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে রক্তাক্ত গ্রেপ্তার ও কারাগারে নিক্ষেপ নয়া দিগন্ত-এর কার্যালয়ে হামলা
দৈনিক সংগ্রাম-এর অফিসে ভাঙচুর ও সম্পাদককে লাঞ্ছিত করা প্রতিবারই একটি জিনিস অভিন্ন ছিল-বিচারহীনতা।
এই বিচারহীনতাই আজ প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের দরজায় আগুন নিয়ে এসেছে।বিপ্লবী সত্য বেছে বেছে স্বাধীনতা হয় না অনেকে বলেন-“সব পত্রিকা একরকম নয়।”সেটাই স্বাভাবিক।কিন্তু প্রশ্ন হলো-ভিন্ন হলেই কি আগুন বৈধ?প্রশ্ন করলেই কি হামলা ন্যায্য?যে রাষ্ট্র এক পত্রিকার কণ্ঠ রোধ করে,সে রাষ্ট্র ধীরে ধীরে সব কণ্ঠকেই শত্রু বানায়।আজ যদি প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের পাশে দাঁড়ানো হয়,কিন্তু গতকালের নিপীড়ন ভুলে যাওয়া হয়-তবে এই প্রতিবাদ অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

কারণ স্বাধীনতা খণ্ডিত হলে,সবাই অনিরাপদ হয়।
নোয়াব প্রতিবাদ বিলম্বিত দায়িত্ব এই প্রেক্ষাপটে সম্পাদক পরিষদ (নোয়াব)-এর প্রতিবাদ ও মানববন্ধন কেবল একটি কর্মসূচি নয়-এটি ছিল সাংবাদিক সমাজের সমষ্টিগত আত্মরক্ষা।এটি ছিল রাষ্ট্রের প্রতি স্পষ্ট বার্তা-আমরা ভিন্ন হতে পারি,কিন্তু আগুন লাগলে আমরা এক।”এই ঐক্য যদি আগে গড়ে উঠত,হয়তো আজ আগুন এত দূর আসত না।

রাষ্ট্র প্রশ্ন দায়-রাষ্ট্রকে আজ সরাসরি জবাব দিতে হবে-হামলাকারীরা কারা?তারা কেন এখনো গ্রেপ্তারমুক্ত?সংবাদপত্রের নিরাপত্তা কি কেবল শোকবার্তায় সীমাবদ্ধ?এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না দিলে রাষ্ট্র নিজেই ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াবে।কারণ ইতিহাস শুধু আগুন লাগানোদের নয়,নীরব দর্শকদের অপরাধও লিখে রাখে।শেষ কথা কলম আগুন।প্রথম আলো পুড়লেও আলো নিভে না।ডেইলি স্টার আক্রান্ত হলেও নক্ষত্র মরে না।কলম পুড়িয়ে সত্য থামানো যায় না-বরং প্রতিরোধ আরও ধারালো হয়।এ লড়াই কোনো একটি পত্রিকার নয়।এ লড়াই বাংলাদেশের আত্মার লড়াই।

মো:আবু তাহের পাটোয়ারী
সম্পাদক,নবজাগরণ
অনলাইনে পড়ুন:www.thenabajagaran.com