নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি:
নবীগঞ্জ প্রেসক্লাব-যে সংগঠনটি সত্য,ন্যায় ও জনস্বার্থের পক্ষে কথা বলার কথা-সেই প্রতিষ্ঠানই আজ নিজস্ব গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন, অনিয়ম,বেআইনি ভোটার তালিকা ও সহিংসতার অভিযোগে প্রশ্নবিদ্ধ।পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে,আসন্ন নির্বাচন ঘিরে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।এই প্রেক্ষাপটে আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের নির্বাচন বাতিলের দাবিতে জেলা প্রশাসক, হবিগঞ্জ বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও একজন পেশাদার সাংবাদিক।নীতি ও সততার
শাস্তি-কোণঠাসা করার রাজনীতি আবেদনে আবেদনকারী
অভিযোগ করেন, প্রেসক্লাবের নীতি ও সততার পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় এবং একটি প্রভাবশালী অংশের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে তাকে দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পিতভাবে কোণঠাসা করা হচ্ছে।বিশেষ করে ২০২৪ সালে ক্লাব ভবন নির্মাণে দুর্নীতির প্রতিবাদ করায়,তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সেলিম তালুকদার তাকে গঠনতন্ত্রবিরোধীভাবে নির্বাহী সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেন। এখানেই থেমে থাকেনি প্রতিহিংসা-২০২৫ সালে নির্বাচিত সদস্য হওয়া সত্ত্বেও তাকে কোনো সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়নি এবং পরবর্তীতে বেআইনিভাবে নির্বাহী ও সাধারণ সদস্য পদ থেকেও অপসারণ করা হয়।
গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে নির্বাচন কমিশন!
আবেদনে আরও গুরুতর অভিযোগ উঠে এসেছে-নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্রের ধারা ও উপধারা অমান্য করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ২০২৬ সালের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করে বেআইনি ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে, যা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক কাঠামোকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়ে আবেদনকারী তার নিয়োজিত আইনজীবীর মাধ্যমে ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করলেও,আজ পর্যন্ত কোনো সন্তোষজনক জবাব পাওয়া যায়নি।
প্রতিবাদের জবাব সন্ত্রাস?সবচেয়ে উদ্বেগজনক অভিযোগটি আসে নিরাপত্তা ও সহিংসতা প্রসঙ্গে। আবেদনে উল্লেখ করা হয়,২০২৫ সালের ৩ জুলাই নবীগঞ্জ বাজারে আবেদনকারীর ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে, যার সঙ্গে প্রেসক্লাবের কয়েকজন নেতার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।ওই ঘটনার পর এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং বর্তমানে একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এ অবস্থায় নির্বাচন আয়োজন মানেই নতুন করে সংঘাত,সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার ঝুঁকি-এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
নিষিদ্ধ রাজনীতি ও অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা
আবেদনকারীর দাবি অনুযায়ী,প্রেসক্লাব নির্বাচনকে ঘিরে নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তি পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে। ফলে একটি সাংবাদিক সংগঠনের নির্বাচন ক্রমেই পরিণত হচ্ছে রাজনৈতিক ও সন্ত্রাসী শক্তির সংঘর্ষস্থলে-যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য ভয়াবহ অশনিসংকেত।
প্রশাসনের হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি
এই সার্বিক পরিস্থিতিতে আবেদনকারী জেলা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন-আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখের নির্বাচন বাতিল ঘোষণা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ পরিস্থিতির অবনতি রোধে প্রয়োজনে ১৪৪ ধারা জারি
যে প্রেসক্লাব গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের কথা বলবে,সে সংগঠন যদি নিজেই গঠনতন্ত্র ভাঙে,ভিন্নমতকে দমন করে এবং সন্ত্রাসের অভিযোগে জড়িয়ে পড়ে-তবে সেই নির্বাচন কি আদৌ গ্রহণযোগ্য হতে পারে?প্রশাসনের নীরবতা কি ভবিষ্যতে আরও বড় অঘটনের পথ প্রশস্ত করবে?নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের নির্বাচন এখন আর একটি সাংগঠনিক বিষয় নয়-এটি আইনশৃঙ্খলা,সাংবাদিকতার নৈতিকতা ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের পরীক্ষার ক্ষেত্র।





